গোটা স্কুলে ছাত্র সংখ্যা মাত্র দুইজন!! ৮ হাজার ২০৭টি স্কুলের মধ্যে মুর্শিদাবাদের ৩২৬টি বেশিপ্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হতে যাচ্ছে।
রাজ্যের সরকার পোষিত ৮ হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ হতে চলেছে। এরমধ্যে ৬ হাজার ৮৪৫টি প্রাথমিক এবং
১ হাজার ৩৬২টি উচ্চ প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হতে যাওয়া
৮ হাজার ২০৭টি স্কুলের মধ্যে ৫৩১টি স্কুল রয়েছে
কলকাতায়। সরকারি তথ্য পরিসংখ্যান থেকেই এই
ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি রাজ্যের যেসব স্কুলে ৩০ জন পড়ুয়া রয়েছে,
সেইসব স্কুলের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়
শিক্ষা দপ্তর থেকে। সেই তালিকা ইতিমধ্যে প্রকাশিত
হয়েছে। সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ৩০ জন কম পড়ুয়া
স্কুলের সংখ্যা মোট ৮ হাজার ২০৭টি প্রাথমিক, উচ্চ
প্রাথমিক এই স্কুলগুলিতে বর্তমানে কোথাও ১৫ জন
পড়ুয়া, কোথাও ১৮ জন। আবার মাত্র ২ জন পড়ুয়া
রয়েছে, এমন স্কুলের সংখ্যাও রয়েছে অনেক। বন্ধ হতে
যাওয়া ৮ হাজার ২০৭টি প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে
বর্তমানে স্থায়ী শিক্ষকের সংখ্যা ১৯ হাজার ৮৩ জন।
পার্শ্ব শিক্ষকের সংখ্যা ১ হাজার ১৮১ জন।
৮ হাজার ২০৭টি স্কুলে যদি ৩০ জন করে পড়ুয়া
থাকে, তাহলে পড়ুয়ার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লক্ষ ৪৬ হাজার
২১০। থাকার কথা কত? প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ
শ্রেণি পর্যন্ত এক-একটি স্কুলে সাধারণত ৩০০ থেকে
৩৫০ জন পড়ুয়ার থাকার কথা। বন্ধ হতে যাওয়া ৬
হাজার ৮৪৫টি প্রাথমিক স্কুলে কত পড়ুয়া থাকার কথা?
যদি একটা প্রাথমিক স্কুলে ৩০০ জন পড়ুয়া ধরা যায়
তাহলে ৬ হাজার ৮৪৫টি স্কুলে ২০ লক্ষ ৫৩ হাজার
৫০০ জন পড়ুয়া থাকার কথা।
অন্যদিকে, উচ্চ প্রাথমিক অর্থাৎ পঞ্চম থেকে অষ্টম
শ্রেণি পর্যন্ত যদি একটি স্কুলে ৩০০ জন পড়ুয়া ধরা
যায়, তাহলে বন্ধ হতে যাওয়া ১ হাজার ৩৬২টি উচ্চ
প্রাথমিক ৪ লক্ষ ৮ হাজার ৬০০ জন পড়ুয়া থাকার
কথা। ফলে বন্ধ হতে যাওয়া ৮ হাজার ২০৭টি প্রাথমিক,
উচ্চ প্রাথমিক থেকে প্রায় ২৫লক্ষ পড়ুয়া সরকারি শিক্ষা
ব্যবস্থা থেকে ছিটকে গিয়েছে।
৮ হাজার ২০৭টি স্কুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি
স্কুল বন্ধ হতে চলেছে নদীয়া জেলায়। এই জেলায় ১
হাজার ১০০টি প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হবে।
কলকাতার ৫৩১টি স্কুল বন্ধ হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগণার
৫৩৮টি, বাঁকুড়ার ৮৮৬টি, বীরভূমের ৩২০টি,
দার্জিলিঙে ৪১৮টি, হুগলীর ৩০৩টি, হাওড়ার ২৭৩টি,
জলপাইগুড়ির ২১৬টি, ঝাড়গ্রামের ৪৭৮টি, কালিম্পঙ
৩১২টি, মালদহের ১৪৬টি, মুর্শিদাবাদের ৩২৬টি বেশি
প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হতে যাচ্ছে।
শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, "যে
সব স্কুলে ৩০ জন কম পড়ুয়া রয়েছে তার পরিসংখ্যান
ডিআই'দের কাছ থেকে চাওয়া হয়। যেসব স্কুলে ৩০
জন কম পড়ুয়া থাকবে সেইসব স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই সিদ্ধান্তের পর তিন
মাস আগে ডিআই'দের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন
শিক্ষা দপ্তরের সচিব মণীশ জৈন। ডিআই'দের দেওয়া
তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ৮ হাজার বেশি প্রাথমিক, উচ্চ
প্রাথমিক স্কুলে ৩০ জন কম পড়ুয়া রয়েছে। এইসব
স্কুলের পড়ুয়া, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের আশপাশের স্কুলে
বদলি করা হবে।" এই ৮ হাজার ২০৭টি প্রাথমিক এবং
উচ্চ প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হওয়া মানে এত সংখ্যক স্কুলে
শিক্ষক নিয়োগ আর হবে না। রাজ্যের লক্ষ লক্ষ বেকার
যুবক-যুবতী শিক্ষক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিএড,
ডিএলএড প্রশিক্ষণ নিয়ে বসে রয়েছে আগামী দিনে
তাঁদের স্বপ্ন চুরমার হতে চলেছে।
গত দুই দশক ধরে রাজ্যের সরকার পোষিত
স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। এদের স্কুলে ফিরিয়ে
আনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ
দেখা যায়নি। বিশেষ করে করোনা অতিমারীর পর
সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া স্কুল ছুট
হয়েছে। তার পরিণাম হিসাবে চলতি মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪
লক্ষ কম পরীক্ষার্থী বসছে। এরমধ্যে নবম-দশমে ২ লক্ষ
ছেলেমেয়ে রেজিস্ট্রেশন করানোর পরও এনরোলমেন্ট
ফরম পূরণ করেনি। অর্থাৎ, ২ লক্ষ ছেলেমেয়ে সরাসরি
সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ছিটিকিয়ে গেছে। দুর্নীতির
জন্য দীর্ঘদিন ধরে স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া,
উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে টাকার বিনিময় বদলি নেওয়ার
ফল হিসাবে সরকার পোষিত স্কুলগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে।
৮ হাজার ২০৭ টি প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক স্কুল বন্ধ
হওয়ার আশঙ্কার ব্যাপারে এবিপিটিএ'র রাজ্য সম্পাদক
ধ্রুবশেথর মণ্ডল বলেছেন, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারের
বদলে তা সঙ্কুচিত করার কথা নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতিতে
রয়েছে। রাজ্য সরকারও সেই পথে হাঁটছে। সরকারি
শিক্ষা ব্যবস্থাকে সঙ্কুচিত করে রাজ্য সরকার নিজের দায়
ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। করোনা অতিমারীর পর প্রাথমিক
স্কুলগুলির হাল অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে গেছে। ছাত্র-ছাত্রীরা
স্কুলে আসতে চাইছে না। তাদের বিদ্যালয় ফেরানোর
কোনও উদ্যোগ সরকার নিচ্ছে না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন