আম্বানি বা আদানির মত ধনী নন রতন টাটা, কেন বলতে পারেন?
আম্বানি বা আদানির মত ধনী নন রতন টাটা, কেন বলতে পারেন? এর জবাব দিয়েছেন এক ফৌজি অফিসার। তাঁর মুখেই শুনুন এর কারণ।
" এই তো কদিন আগেই প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ভবনে আমার একটা ডিউটি পড়েছিল। অর্ডার পেয়েই কাশ্মীর থেকে আমি দুদিন আগেই নতুন দিল্লি এসেছি ট্রেন জার্নি করে। এসেই তাজ হোটেলে একটা স্যুট নিয়েছি, অত দামী হোটেলে থাকার কারণ একটাই, তাহলো এই হোটেল থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন অনেক কাছে পড়বে। আমারও যাওয়ার সুবিধা হবে। যেদিন এসেছি সেই সন্ধ্যায় আমি ঘরে ঢুকে রিসেপশনে ফোন করে রুম সার্ভিস বয় কে ডেকে পাঠালাম। সার্ভিস বয় আসতেই আমি জানালাম আমার কিছু পোষাক আয়রন করে দিতে হবে। বলেই নিজের কিছু পোষাক ওর হাতে দিলাম, বললাম আমার কিন্তু একটু তাড়াতাড়ি চাই। সার্ভিস বয় আমার পোশাক দেখেই চমকে উঠল। সম্ভ্রমের গলায় বলল,স্যার, আপনি কি ফৌজি? আমি স্মিত হেসে মাথা নাড়তেই ছেলেটি তখনই পকেট থেকে মোবাইল বার করে, অতি নম্র গলায় বলল, স্যার, আমি কি আপনার সাথে একটা সেলফি নিতে পারি? আমি রাজি হতেই, সে সেলফি নিয়ে আপ্লুত কন্ঠে বলল, স্যার, আমি জীবনে কখনও ফৌজি দেখিনি, মুভিতে ফৌজি দেখেছি, কিন্তু চাক্ষুষ এই প্রথম দেখার সৌভাগ্য হল আমার। আজ আমি ধন্য হলাম। বলেই বুট শুদ্ধ ঠুকে নিখুঁত ফৌজি কায়দায় আমার স্যালুট করে, অভিভূতের মত উচ্চারণ করল, জয় হিন্দ। মনে হল, ও যেন পবিত্র এক মন্ত্র উচ্চারণ করছে। ও চলে যেতেই আমি দরজা বন্ধ করে নিজের কাজে মনোনিবেশ করলাম। হঠাৎ শুনছি আবার কে দরজা নক করছে, বিরক্ত মুখে দরজা খুলতে না খুলতেই আমার বিস্মিত হয়ে দেখছি দুই সুন্দরী মহিলা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। দুজনের হাতেই সেলফোন, ওদের একজন গাঢ় স্বরে বললেন, স্যার,একটা সেলফি নেবো, প্লীজ না করবেন না। আমি তো ব্যাপার স্যাপার দেখে রীতিমত হতভম্ভ! কী বলব না বুঝে বোকার মত একটু হাসলাম। সেলফি নেওয়া শেষ হবার পর নিজের ব্যাগ থেকে দুটো চকলেট বার করে ওদের হাতে দিলাম। ওরা ওই চকলেট হাতে পেয়ে ছোট্ট খুকির মত হাসতে হাসতে চলে গেলেন। তখনও জানিনা আরও কত বিশাল বিস্ময় আমার জন্যে অপেক্ষা করছে।
তখন ঠিক রাত নটা। ঘরে ফোন বেজে উঠল, রিসেপশন থেকে খুব নম্র ভাবে রিসেপশনিস্ট জানালেন, স্যার, আপনাকে ঘরে ডিনার দিতে পারবনা ,সেজন্যে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী ,আপনাকে নিচে আসতে হবে কষ্ট করে। একটু মনঃক্ষুন্ন হলেও রিসেপশনিস্টের অনুরোধ এতই অসাধারণ ছিল যে আমার না করার কোনও সুযোগই ছিলনা। নেমে যেতেই বিশাল এক বিস্ময়ের মুখোমুখি হলাম।আমাকে এক ঝাঁক স্টাফ অত্যন্ত সন্মানের সঙ্গে এক মস্ত ব্যাঙ্কয়েট হলে নিয়ে এল। সেই হলটি এমনই সুশোভিত যে আমার বাক্য স্ফূর্তি হলনা। আমি এতদিন কাশ্মীরের জঙ্গলে জঙ্গলে দিন রাত ভুলে ডিউটি দিয়ে গেছি দিনের পর দিন, এমন রাজকীয় সমাদর আমার যে স্বপেরও অগোচরে! হোটেলের ম্যানেজার আমার দিকে এক বিশাল বোকে নিয়ে এগিয়ে এলেন, আমার সম্মানে এক সুদৃশ্য টেবিলে নানা উপাদেয় খাবার সজ্জিত থরে থরে, ম্যানেজার নিজেই আমার সাথে বসে ডিনার নিলেন। যাবার আগে করমর্দন করে বললেন, স্যার আমাদের হোটেল এই রাতে আপনাকে পেয়ে ধন্য মনে করছে। একটা স্বপ্নের ঘোর আমার সারা শরীরে, যেন একটা আবেশ ঘিরে রয়েছে আমার শরীর ও মনে। ঠিক যেন টলতে টলতে ঘরে ফিরে এলাম । পরের দিন সকাল। পঁচিশে জানুয়ারি ।সাত সকালে ফৌজি পোশাক পরে হোটেলের দরজার মুখে আসতেই দেখি আমার জন্যে BMW গাড়ি তৈরি রয়েছে। এই গাড়িতো অতি ধনী লোকেরা ও গণ্যমান্য পুরুষেরাই ব্যবহার করেন, আমার মত সামান্য এক ফৌজি অফিসারতো এমন গাড়িতে ওঠার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা।সাধারণ জিপসি গাড়িই আমাদের যথেষ্ট। ওই BMW গাড়িতে করেই রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ সারলাম। হোটেলে সেদিনও আমার সেবা যত্নের কোনও ত্রুটি হলনা। চেক আউটের সময় আমি দুরু দুরু বুকে রিসেপশনিস্ট কে স্যুটের কার্ডটি দিলাম। রিসেপশনিস্ট মহিলা আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুদিন আমাদের হোটেল কেমন লাগল স্যার? আমি বললাম, আপনাদের আতিথেয়তা আমি চিরদিন মনে রাখব, এবার আমার বিল যদি তৈরী হয়ে থাকে, একটু তাড়াতাড়ি দিন, প্লীজ! রিসেপশনিস্ট মহিলা বললেন, আপনার এখানের যাবতীয় খরচ হোটেল কর্তৃপক্ষ স্পন্সর করেছে, আপনারা যে জাতির গর্ব স্যার। দেশকে আপনারাই নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে নিরাপত্তা দিয়ে চলেছেন, আপনার জন্যে এই সামান্য কিছু করে আমরা যে নিজেরাই ধন্য হলাম স্যার।
আমি জানতাম এই দুদিন কী বিশাল খরচ হয়েছে আমার জন্যে, সেই টাকাটা বেঁচে গেল ভেবে যে খুব খুশি লাগছে তা নয়, বরং এমন আশাতীত সমাদরে আমি নিজের এই ফৌজি কর্তব্য কে যেন নতুন করে উপলব্ধি করলাম। ফিরে এসে চিঠি লিখলাম একটা তাজ গ্রুপের CEO কে। বিস্তারিত সব জানিয়ে তাঁদের আমার কৃতজ্ঞতাও জানালাম। কদিন বাদেই চিঠির উত্তর এল, সেখানে CEO সাহেব " স্যার, আপনার অবগতির জন্য জানাই, আমাদের তাজ হোটেল গ্রুপ ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে তাঁরা ফৌজি অফিসারদের তাঁদের যে কোনো হোটেলেই সম্পূর্ন নিজখরচায় থাকার সম্পূর্ন দায়িত্ব বহন করবে। দেশের মহান সেনাদের আমরা এ ভাবেই নিজেদের শ্রদ্ধা জানাতে পারবো।
এই দেশাত্ববোধ আছে বলেই রতন টাটার আজও আম্বানি ও আদনিদের সমকক্ষ হতে পারলেন না। কারণ দেশপ্রেম নিয়ে রতন টাটা ওদের সঙ্গে দৌড়াতে রাজি নন আজও। আসুন সবাই সেই দেশরত্ন কে আমরা মনে মনে শ্রদ্ধা জানাই।
🌹🌹 সংগৃহীত
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন